“মার্চ ফর গাজা” (March for Gaza) একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার-ভিত্তিক আন্দোলন, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও স্বাধীনতা সমর্থন করা। এটি শুধুমাত্র একটি পদযাত্রা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান – যার মাধ্যমে বিশ্ববাসী গাজায় চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়।
মার্চ ফর গাজার ইতিহাস
“March for Gaza” মূলত ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে, যখন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ব্যাপক হারে শুরু হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন দেশে থাকা মানবাধিকার কর্মী, মুসলিম ও অমুসলিম সংগঠন, ছাত্রসমাজ এবং সাধারণ জনগণ সামাজিক মাধ্যমে এবং রাস্তায় প্রতিবাদ শুরু করেন। প্রতিবার ইসরায়েলি হামলার পর এই পদযাত্রা ও বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায়।
গাজা সংকট: কেন প্রতিবাদ প্রয়োজন?
গাজা একটি ছোট উপত্যকা, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস করে, যার বেশিরভাগই শরণার্থী। বিগত কয়েক দশক ধরে সেখানে:
- ইসরায়েলি অবরোধ (blockade)
- বারংবার বিমান হামলা
- বিদ্যুৎ ও পানির সংকট
- স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ অবস্থা
এসবই গাজার জনগণকে এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এসব কারণে “মার্চ ফর গাজা” একটি মানবিক কর্তব্যে রূপ নিয়েছে।
মার্চ ফর গাজা এর লক্ষ্য ও দাবি
১. গাজা থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হোক
২. নিরীহ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর বোমা হামলা বন্ধ হোক
৩. জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা যেন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে
৪. গাজার জনগণের জন্য মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করা
৫. ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রগঠনের অধিকার স্বীকৃত হোক
কোথায় কোথায় অনুষ্ঠিত হয় মার্চ ফর গাজা?
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে:
- যুক্তরাজ্য (London)
- যুক্তরাষ্ট্র (New York, Washington DC)
- কানাডা (Toronto, Vancouver)
- তুরস্ক (Istanbul)
- মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া
- বাংলাদেশ (ঢাকা, চট্টগ্রাম)
- ফ্রান্স, জার্মানি সহ ইউরোপের বহু দেশ
মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি বাংলাদেশ
বাংলাদেশেও ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার গ্রুপ ও ইসলামী দলগুলোর উদ্যোগে “মার্চ ফর গাজা” অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার বায়তুল মোকাররম, শাহবাগ, জাতীয় প্রেসক্লাব ও গুলিস্তান এলাকায় এই কর্মসূচি দেখা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্চ ফর গাজা
ডিজিটাল যুগে এই আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। হ্যাশট্যাগ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ গাজার পক্ষে সংহতি জানায়।
জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ:
- #MarchForGaza
- #FreeGaza
- #SavePalestine
- #StandWithGaza
- #EndTheOccupation
- #GazaUnderAttack
ইনফ্লুয়েন্সার, সেলিব্রিটি, সাংবাদিক এবং সাধারণ জনগণ সোশ্যাল মিডিয়ায় গাজার অবস্থা তুলে ধরে বিশ্বমত গঠনে ভূমিকা রাখছে।
শিক্ষার্থী ও যুব সমাজের ভূমিকা
বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা গাজা নিয়ে প্রতিবাদ, ওয়েবিনার, আলোচনা সভা ও মানববন্ধন করছে। তারা মনে করে, ফিলিস্তিন ইস্যু শুধু একটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং এটি একটি মানবিক সঙ্কট।
মার্চ ফর গাজা কেবল পদযাত্রা নয়, এটি একটি বার্তা
“March for Gaza is not just a protest; it is a call for humanity, for justice, and for peace.”
এই কর্মসূচির মাধ্যমে বলা হয়—
- চুপ থাকাও অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান
- ফিলিস্তিনের শিশুদের মুখে হাসি ফেরাতে হলে বিশ্বকে জেগে উঠতে হবে
- গাজার পক্ষে দাঁড়ানো মানে মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো
“মার্চ ফর গাজা” বিশ্ববাসীর সেই আত্মচিৎকার যা বলে— “যথেষ্ট হয়েছে!”। এটি একটি চেতনাজাগানিয়া প্রতিবাদ, যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মানবতার পক্ষে ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে। এই আন্দোলন আমাদের শেখায় যে প্রতিবাদ একটি সামাজিক দায়িত্ব, এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো মানে ন্যায় ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো।
আপনার মতামত কী?
আপনি কি মার্চ ফর গাজা সম্পর্কে আগ্রহী? আপনি কি এই ধরনের মানবিক আন্দোলনে অংশ নিতে চান বা সমর্থন করতে চান?
কমেন্ট করে জানান আপনার চিন্তা। এবং আর্টিকেলটি শেয়ার করুন যেন আরও মানুষ গাজার পক্ষে জাগে।