টেসলা এবং স্পেসএক্সের প্রধান, ইলন মাস্ক, সম্প্রতি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই খবরটি মার্কিন রাজনীতিতে রীতিমতো আলোচনার ঝড় তুলেছে। সাবেক টুইটার প্ল্যাটফর্ম এক্সে (বর্তমানে এক্স) মাস্ক নিজেই এই ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে তিনি তার লক্ষ্যের কথা বলেছেন: “আপনার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে আজ আমেরিকা পার্টির জন্ম হলো।”
মাস্কের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে একটি জনমত জরিপ। তিনি এক্সে একটি জরিপ চালিয়েছিলেন যেখানে প্রায় ১২ লাখ ভোট পড়েছিল, এবং এর দুই-তৃতীয়াংশই একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে রায় দিয়েছিল। এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রচলিত দুই-দলীয় ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন কিছু চাইছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিরোধ: ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ এবং তার প্রতিক্রিয়া
ইলন মাস্কের এই দল গঠনের ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার প্রকাশ্য মতবিরোধ চরমে। সম্প্রতি ট্রাম্পের সই করা ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ বা করছাড় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিল নিয়ে মাস্ক তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার মতে, এই বিল “যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে।”
একসময় ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন ইলন মাস্ক। তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন এবং ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কিন্তু নতুন ব্যয় পরিকল্পনা নিয়ে তাদের মধ্যে যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল, তা এখন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে চরম আকার ধারণ করেছে।
ট্রাম্পও এই বিতর্কে চুপ থাকেননি। তিনি হুমকি দিয়েছেন যে, মাস্কের কোম্পানিগুলো কেন্দ্রীয় সরকার থেকে যে ভর্তুকি পায়, তা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এই হুমকির সরাসরি প্রভাব পড়েছে টেসলার শেয়ারের ওপর। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর টেসলার শেয়ারের দাম ৪৮৮ ডলারে উঠেছিল, যা গত এপ্রিল মাসে অর্ধেকে নেমে আসে এবং সর্বশেষ গত সপ্তাহে ৩১৫ ডলারে লেনদেন হয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহ শুধু রাজনৈতিক নয়, আর্থিক বাজারেও এর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
‘আমেরিকা পার্টি’-এর ভবিষ্যৎ: দুই-দলীয় ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ?
ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ মার্কিন রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। রিপাবলিকান দল আশঙ্কা করছে, এই নতুন দল ২০২৬ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে, মার্কিন রাজনীতিতে গত ১৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট এই দুই দলের আধিপত্য বিদ্যমান। ইলন মাস্ক যতই সম্পদশালী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি হোন না কেন, এই দীর্ঘস্থায়ী দুই-দলীয় ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন একটি দলকে প্রতিষ্ঠিত করা নিঃসন্দেহে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
আরো পড়ুনঃ
এই মুহূর্তে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হলো: ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ কি সত্যিই মার্কিন রাজনীতিতে একটি স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারবে, নাকি এটি কেবল একটি ক্ষণস্থায়ী আলোড়ন সৃষ্টি করে মিলিয়ে যাবে? এটি দেখার বিষয় যে, এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথকে কীভাবে প্রভাবিত করে।