সাঁতার শেখার ৬ টি সহজ উপায় নিয়ে হাজির হয়েছি বন্ধুরা। যারা সাঁতার জানেন না তারা নেীপথে ভ্রমন করতে বেশ ভয় পেয়ে থাকেন। অনেকে সে কারনে পানি থেকে দূরে থাকেন। আবার পানি দেখে ভয় পাওয়াকে হাইড্রোফোবিয়া বলে। তাই বন্ধুরা আজকে থেকেই সাঁতার শেখার চেষ্টা শুরু করে দিন। তবে হ্যাঁ যারা গ্রামে থাকেন তারা খুব সহজেই সাতার শিখতে পারেন কিন্তু যারা শহরে থাকেন তাদের সাতার শেখার জন্য পর্যাপ্ত পুকুর বা খাল নেই তবে চিন্তার কোন কারন নেই কোথায় সাঁতার শিখবেন তা আমি এই লেখার শেষে বলে দিবো। তো দেরি করছেন কেনো আজই শুরু করে দিন আপনার সাঁতার।
পানিকে ভয় করবেন না
সাঁতার শেখার প্রথম ধাপ হল পানির সাথে সখ্যতা তৈরি। ভয়কে জয় করে পানিতে নামুন। কম গভীরতা সম্পন্ন কোথাও দাঁড়ান, লেকের সিঁড়িতে, পুকুরের ঘাটে যেখানে পা মাটিতে ঠাঁই পাবে। আপনার প্রশিক্ষক তো আপনার সাথেই আছেন। ভয়ের কিছু নেই।
পানিতে ভেসে থাকা
২য় ধাপে পানিতে ভেসে থাকা শিখুন। আমরা যারা সাঁতার জানি না তাদের মনে হবে, পানিতে নামলেই আমরা ডুবে যাব ঠিক একটা পাথরের টুকরো যেভাবে ডুবে যায়। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। ভেসে থাকা খুবই সহজ।
আপনি ততক্ষণ স্বচ্ছন্দে ভেসে থাকতে পারবেন যতক্ষণ আপনার লাংস থাকবে বাতাসে পরিপূর্ণ। কোনকিছুকে হাত দিয়ে ধরে নিজের শরীরকে ধীরে ধীরে শিথিল করে দিন।
স্টারফিশের মত ভেসে থাকা
পানিতে আকাশের দিকে মুখ করে পুরো শরীরকে ভাসিয়ে রাখতে শিখুন। পুরো শরীর থাকবে একদম সোজা, হাত পা চার দিকে ছড়িয়ে ঠিক স্টারফিশ যেভাবে থাকে।
পানিতে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ
৪র্থ ধাপে পানির নিচে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করুন। এটি খুবই জরুরী।
ভাসমান অবস্থায় হাত পা সঞ্চালন
এবার ভাসমান অবস্থায় নিজের হাত পা কে নাড়ুন। ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট তালে হাত পা সঞ্চালন করুন। সাইকেল চালানোর সময় যেভাবে পা চালিয়ে আমরা প্যাডেল ঘুরাই সেভাবে পা চালনা করুন। হাতকেও একই তালে চালনা করুন।
মাথা পানির উপরে তুলুন
হাত পা সঞ্চালন করতে করতে এবার মুখ উপরে তোলার চেষ্টা করুন। মাথা পানির উপরে থাকবে এবং কাঁধ বরাবর থাকবে আপনার সারা শরীর ভাসমান অবস্থায়। একই সাথে হাত পা সঞ্চালনের অনুশীলন করতে থাকুন।
সামনে এগিয়া যাওয়া
সপ্তম এবং শেষ ধাপ হাত পা চালনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। বুকে ভর দিয়ে সামনের দুই হাতে পানিকে পেছনে সরিয়ে দিয়ে নিজেকে সামনে ঠেলে দিন।
বুকে ভর দিয়ে নিজেকে সামনে ঠেলে দেয়া একটি কঠিন পদ্ধতি। কিন্তু অনুশীলন করতে থাকলে একসময় শিখে যাবেন।
প্রয়োজনীয় টিপস
১. নাক সহ মাথা পানিতে ডুবিয়ে সাঁতার কাটতে হবে।
২. যে কেউ চাইলে ৩০ সেকেন্ড দম বন্ধ রাখতে পারেন, আর ৩ সেকেন্ডে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। তারমানে, মিনিটে ২ বার নিঃশ্বাস নিলেই হলো।
৩. যতক্ষণ দম বন্ধ থাকে, ততক্ষণ মানুষ কোন চেষ্টা ছাড়াই পানিতে ভেসে থাকতে পারে, হাত পা নাড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। এ কথাটা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে।
৪. ৩০ সেকেন্ড পর নিশ্বাস নেবার প্রয়োজন হলে শুধু সেই সময়ে হাত নেড়ে পানিতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ঘাড় কাত করে, মাথার বেশীর ভাগটা পানির নিচে থাকা অবস্থায়, ঠোট দুটো শুধু পানির উপরে এনে নিশ্বাস নিতে হবে।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নিশ্বাস নিয়েই আবার মাথাকে পানির মধ্যে ডুবিয়ে ফেলতে হবে। এই নিশ্বাস নেবার টেকনিকটা প্র্যাকটিস করতে হবে। কোন সাঁতারু/ ট্রেইনার এর সাহায্য নিতে হবে। এই টেকনিক টুকু আয়ত্তে আসলেই সাতার শেখা শেষ।
৫. সাঁতার কাঁটা অবস্থায় এগিয়ে যাবার জন্য হাত ও পা দুটোই একসাথে ব্যবহার করতে হবে। পায়ের টেকনিকটা জরুরী। পা ডুবে থাকলে শরীর বাঁকা হয়ে পানির সাথে বাঁধা তৈরি করে, এবং সামনে আগানোর গতি কম হয়। তবে এটাও দুই/তিন সপ্তাহ প্র্যাকটিস করলে আয়ত্তে আনা সম্ভব।
৬. পানিতে মাথা ডোবানো অবস্থায় মানুষ আতঙ্ক বোধ করতে থাকে, তাতে দ্রুত দম ফুরিয়ে যায়। নিজেকে সাজেশন দিয়ে আতঙ্ক দূর করতে হবে। তাহলে ঘন ঘন দম নিতে হবে না।
৭. সাঁতারের চশমা থাকলে ভালো হয়। যে কোন পানিতে ট্রাভেলে যাওয়ার সময় ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে একটা চশমা কিনে নিতে হবে।
৮. পুরোপুরি সাঁতার শেখার আগে কেউ সাগর বা নদীতে নামতে চাইলে, প্লাস্টিকের লাইফ জ্যাকেট কিনে নেওয়া ভাল। কয়েকশত টাকার মধ্যেই লাইক জ্যাকেট কিনতে পারবেন।
কোথায় শিখবেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ছাড়াও বহিরাগত নারী-পুরুষেরা এখানে সাঁতার শিখতে পারবেন। বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রয়েছে আলাদা সময়সূচি। ভর্তি হতে চাইলে এখান থেকে ফরম কিনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক ফি ১০০ টাকা।বহিরাগতদের জন্য মাসিক ফি এক হাজার ৫০০ টাকা। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য মাসিক ২৫০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সবাই মাসে আট দিন অনুশীলন করতে পারবেন। তবে শিক্ষকদের বার্ষিক ফি এক হাজার, ছয় মাসের জন্য ৭০০ টাকা। বহিরাগতদের বার্ষিক ফি আট হাজার এবং ছয় মাসের জন্য ছয় হাজার টাকা। যোগাযোগ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুল,শারীরিক শিক্ষা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।ফোন: ০১৭১৯৮৭৮৯৪৮
রতন হেলথ ক্লাব, গুলশান
এখানে ভর্তি হতে লাগবে ৫০০ টাকা। তা ছাড়া মাসে দিতে হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা। শুক্রবার ছাড়া যেকোনো দিন দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যোগাযোগ করতে পারেন।
ঠিকানা : বাড়ি ২/সি, রোড-২৯, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২
ফোন : ৮৮২৮৮৫৪।
ক্যাডেট কলেজ ক্লাব লিমিটেড, গুলশান
যাদের সাঁতার জানা আছে তারা এখানে ২ হাজার টাকায়, আর যাদের জানা নেই তারা ২ হাজার ৫০০ টাকায় সাঁতার কাটতে পারবেন মাসব্যাপী।
যোগাযোগ : বাড়ি-১৪/ই, রোড-৯, গুলশান-১, ঢাকা।
সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স
ধানমণ্ডিতে অবস্থিত এই ক্রীড়া কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে প্রথম মাসে লাগবে ২ হাজার টাকা। আর দ্বিতীয় মাস থেকে দিতে হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। এটি শুক্রবার ছাড়া বাকি দিনগুলোয় খোলা থাকে।
জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্স, মিরপুর-২
ভর্তির জন্য প্রথম মাসে লাগবে ২ হাজার টাকা। পরের মাসে ১ হাজার ৬০০ টাকা। রবি ও সোমবার বাদে পাঁচ দিন এক ঘণ্টা করে ক্লাস।
ফোন : ৯০০১২৭২, ৮০১৫১৪১, ৮০১৫০৪১।
ঢাকা স্টেডিয়াম সুইমিংপুল
ভর্তি ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বিতীয় মাস থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। মঙ্গল ও বুধবার ছাড়া বাকি পাঁচ দিন খোলা।
যোগাযোগ : ঢাকা স্টেডিয়াম সুইমিংপুল, পল্টন, ঢাকা।
ফোন : ০১৭১২৬০৪৯৫২।
রূপসী বাংলা হোটেল সুইমিংপুল
শাহবাগে অবস্থিত এই পাঁচতারা হোটেলের সুইমিংপুলে সাঁতার শিখতে খরচ হবে ১৮ হাজার টাকা। সপ্তাহে পাঁচ দিন ক্লাস। ২০টি ক্লাসেই তারা সাঁতার শিখিয়ে দেবে আপনাকে।
ফোন : ৮৩৩০০০১।
সোনারগাঁও হোটেল সুইমিংপুল
এই পাঁচতারকা হোটেলের সুইমিংপুলে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার শুরু হয় নতুন কোর্স। ভর্তি ফি ১৮ হাজার টাকা। সপ্তাহে চারটি করে মোট ১৬টি ক্লাসে সাঁতার শেখানো হয়। ফোন : ৮১৪০৪০১।
অফিসার্স ক্লাব সুইমিংপুল
বেইলি রোডে অবস্থিত এ ক্লাবে প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে শুরু হয় নতুন কোর্স। চলে বুধবার ছাড়া টানা ১৬ দিন। ফি ৩ হাজার টাকা।
ফোন : ০১৯১৩৮৫৫১৮১, ৯৩৪৬৬৭৭।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুইমিং কমপ্লেক্স
এখানে আপনি মাসে মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকায় সাঁতার কাটতে পারবেন। মেয়েদের জন্য আছে আলাদা ব্যবস্থা।
ঠিকানা : মিরপুর, ঢাকা।
ফোন : ০১৭১১৪৫৮৮১৬।
হোটেল ওয়েস্টিন সুইমিংপুল, ঢাকা
এখানে সাঁতার শিখতে আপনার খরচ পড়বে ২০ হাজার টাকা।
ঠিকানা : গুলশান-২, ঢাকা।
ম্যানপাওয়ার সুইমিংপুল
তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা।
ফোন : ০২৮৮২২৬১।
বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন
ঢাকায় অবস্থিত এই সুইমিং ফেডারেশনের
ফোন নম্বর : ৯০০১২৭২।
হোটেল আগ্রাবাদ সুইমিংপুল, চট্টগ্রাম
এখানে ৪৫ থেকে ৬০ দিনের জন্য ভর্তি হওয়া যায়। ফি ৬ হাজার টাকা। আর ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে এক বছরের সদস্য হয়েও সাঁতার কাটতে পারবেন।
ফোন : ০৩১ ৭১৩৩১১, ০১৮৪১২২৯৯২১।
দ্য পেনিনসুলা চিটাগাং, জিইসি, চট্টগ্রাম
এখানে সাঁতার শেখা না গেলেও কাটা যায় আয়েশ করে। প্রতিবার সাঁতার কাটতে জনপ্রতি গুনতে হবে ৬০০ টাকা। আর তিনজনের একটা দল নিয়ে হাজির হলে দিতে হবে ১ হাজার ২০০ টাকা।
ফোন : ০৩১ ২৮৫০৮৬০-৯।
আশরাফি সুইমিংপুল অ্যান্ড ফিটনেস
ঠিকানা : সি-১১-১৩ বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা।
ফোন : ৭২৮৬৩০৮।
ম্যানপাওয়ার লিমিটেড
ঠিকানা : ৪১৬/১, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা।
ফোন : ৮৮২২২৬১-৬৩।
মোশারফ সুইমিং সেন্টার
ঠিকানা : বায়তুল মোকাররম পূর্ব গেট, পল্টন, ঢাকা।
ফোন : ৯৫৬৭৭১৪।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সুইমিং কমপ্লেক্স
ঠিকানা : সীমান্ত স্কয়ার [প্রাক্তন রাইফেল স্কয়ার], ঢাকা।
আইভি রহমান সুইমিং কমপ্লেক্স
ঠিকানা : পুরানা পল্টন, ঢাকা।
নোট: লেখাটি কিছুটা পরিমার্জিত এবং অনলাইন সোর্স থেকে নেওয়া।
তথ্যের কিছুটা ভুলভ্রান্তি হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।