ৎ দিয়ে শব্দ গঠন করার নিয়ম কিভাবে করতে হয় উদাহরণ আকারে নিম্নে দেওয়া হলো। খণ্ড-ত বর্ণটি নিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য এসেছে। কেউ বলছেন এটা থাকা উচিত, কেউবা বলছেন এটার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আমার মতামত জানাচ্ছি।
ত্-এর অতি নির্দিষ্ট রূপ হচ্ছে ৎ। এই ৎ-এর ধ্বনি ব্যঞ্জনান্ত ত-এর (ত্) অনুরূপ। অর্থাৎ ত-এর হস্ চিহ্নযুক্ত রূপটি হলো ৎ। ৎ দিয়ে কোনো শব্দ শুরু হয় না।
এই বর্ণ সবসময় অন্ত্যধ্বনিদল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত (তৎসম) শব্দে এর দেখা মেলে। মূলত, শব্দের অন্ত্যে “ত্” থাকলে, তা বাংলা লিপিতে “ৎ” দিয়ে লেখা হয়। যেমন, মহৎ (মহত্)। যুক্তবর্ণে “ত্”-এর ঠিক পরবর্তী বর্ণ হিসেবে যদি ত, থ, ন, ব, ম, য কিংবা র যুক্ত হয়, তবে তারা নিজস্ব বিশেষ যুক্তাক্ষর রূপ (যথাক্রমে, ত্ত, ত্থ, ত্ন, ত্ব, ত্ম, ত্য, ত্র) তৈরি করে; এই সাতটি ব্যতীত বাকি যে-কোনো ব্যঞ্জনবর্ণ “ত্”-এর পরবর্তী স্থানে থাকলে, “ত্” পরিণত হয় “ৎ”-য়ে। উদাহরণস্বরূপ, উত্থান (উত্থান), কিন্তু উৎস (উত্স)।
এর ব্যবহার আকস্মিক ধ্বন্যাত্মক শব্দেও পাওয়া যায়। কিছু কিছু বিদেশী শব্দের উচ্চারনেও “ৎ”-এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে দেশী শব্দে একই উচ্চারণের জন্য এর পরিবর্তে “ত”-ই ব্যবহৃত হয়, যেমন “নাতনি” বা “করাত”।
সৎ |
মহৎ |
ভবিষ্যৎ |
সত্যজিৎ |
হঠাৎ |
থপাৎ |
মড়াৎ |
নাৎসি |
যুযুৎসু |
জ্যোৎস্না |
উৎকর্ষ |
উৎক্ষেপণ |
উৎখাত |
নস্যাৎ |
কুৎসা |
কুৎসিত |
ক্বচিৎ |
উৎপাত |
ভর্ৎসনা |
নোট: আন্তর্জাতিক বা বাংলা ধ্বনিলিপিতে ৎ-এর কোনো ধ্বনি চিহ্ন নেই।
ড. সুনীতি কুমার ৎ-কে বর্ণমালার মধ্যে ধরেন নি। তিনি এটাকে চিহ্ন বলেছেন। ড. মুহম্মদ শহীদউল্লাহ্ ৎ-এর উল্লেখ করেন নি। তৎসম কিছু শব্দে ৎ রাখতে গিয়ে ত এবং ৎ এর ব্যবহার নিয়ে অনেক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বেশ কিছু বিধি-বিধান করতে হয়েছে। কোথায় কোনটা ব্যবহৃত হবে তা নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং বানানে ভুল হয়।
যেখানেই ৎ ব্যবহার করা হোক না কেন, তার উচ্চারণ ত-এর মতোই। একই উচ্চারণে দুটি অক্ষর রাখার যৌক্তিকতা কতটুকু। অনেক ব্যঞ্জন বর্ণই তো খণ্ডিত আকারে উচ্চারিত হয়। আর কোনো ব্যঞ্জন খণ্ডিত না করে শুধু ত খণ্ডিত করা হলো কোন্ যুক্তিতে। ৎ-এর যখন পৃথক কোনো উচ্চারণ নেই, তখন শুধুমাত্র সংস্কৃতের সেবা করার জন্য ৎ রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
ভাষা যেহেতু অভ্যাসের এবং চক্ষুগ্রাহ্য ব্যাপার সেহেতু এধরনের পরিবর্তনে আমাদের মতো পুরানো যুগের মানুষের প্রথমদিকে এসব আত্মস্থ করতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। মৃৎশিল্পী এর জায়গায় মৃত্ শিল্পী লেখা দেখলে অস্বস্তি লাগতে পারে। কিছুদিন গেলেই সব অভ্যাস হয়ে যাবে, চোখ-সহ্য হয়ে যাবে। এ ধরনের আরও কয়েকটি উচ্চারণে অনুপস্থিত অক্ষর বাদ দিলে ভাষা অনেক সহজ হবে, ভুল ও বিভ্রান্তি কম হবে, টাইপে অনেক গতি আসবে এবং বিশ্বায়নের এই যুগে ভাষাটা বাঁচতে পারবে।