হাট্টিমা টিম টিম কবিতাটি মূলত ৪ লাইনের এবং এর লেখক হচ্ছেন সুকুমার রায়। হাট্টিমা শব্দটি সুকুমার রয়ের সৃষ্টি একটি শব্দ এবং যেটি দ্বারা তিনি শামুকের হাটা বুঝিয়েছেন।
সুকুমার রায় রচিত চার লাইনের হাট্টিমা টিম টিম কবিতাটি হলো
“হাট্টিমা টিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমা টিম টিম।“
সুকুমার রায় রচিত চার লাইনের হাট্টিমা টিম টিম কবিতাটির অর্থ
হাট্টিমা শব্দটি সুকুমার রায়ের অভিনব সৃষ্টি। অভিনব শব্দ সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয়।
হাট্টিমা= হাট্ টিমা> হাটটিমা>হাট্টিমা অর্থাৎ শামুকের হাঁটা অথবা শামুক হাঁটে।
ছড়াটির পুরো অর্থ:
হাট্টিমা (শামুক) টিম টিম (ধীরে ধীরে) হাঁটে।
তারা মাঠে ডিম পাড়ে।
তাদের খাড়া দুটি শিং আছে।
তারা (শামুক) মাঠে ধীরে ধীরে হাটে।
শামুকের টিম টিম হাঁটা মানে হলো ধীরে ধীরে হাটে, আর খাড়া দুটো শিং মূলত হাঁটার সময় শামুকের দুটি শুঁড় বা সংবেদনেন্দ্রিয় (sense organ) শিঙের মতো খাড়া হয়ে থাকে। এটাই খাড়া দুটো শিং। সতর্কতা জ্ঞাপক অঙ্গ।
অনেকে বলে থাকেন এই ছড়ায় হট্টিটি পাখির কথা বর্ননা করা হয়ছে। কিন্তু সুকুমার রায়ের জীবদ্দশাতেও হট্টিটি পাখি অত পরিচিত ছিল না, দুর্লভ ছিল। আর হট্টিটি পাখির কোনো শিং ছিলো না। তারা মাঠেও ডিম পাড়ে না। নির্দিষ্ট স্থানে তারা ডিম পাড়ে।
আবার কেউ কেউ একে ননসেন্স রাইম বা অর্থহীন ছড়াও বলে থাকেন।
রোকনুজ্জামান খান এর লিখিত ৪৮ লাইনের হাট্টিমা টিম টিম ছড়াটি
মূলত হাট্টিমা টিম টিম ছড়াটির ৪ লাইনের সাথে রোকনুজ্জামন খান এর লিখিত ৪৮ লাইনের ছড়াটি জুড়ে দিয়ে অনেকে বলে থাকেন যে পুরো ছড়াটি রোকনুজ্জামান এর লেখা। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই ছড়াটি সুকুমার রায় যখন লিখেছেন তখন রোকনুজ্জামান খান এর জন্মই হয় নি আর তিনিও কখনও এই কবিতাটি তার বলে দাবী করেন নি।
এই বিতর্কটি মূলত অনেকে না জেনে করে থাকেন।
হাট্টিমা টিম টিম
__রোকনুজ্জামান খান__
টাট্টুকে আজ আনতে দিলাম
বাজার থেকে শিম
মনের ভুলে আনল কিনে
মস্ত একটা ডিম।
বলল এটা ফ্রি পেয়েছে
নেয়নি কোনো দাম
ফুটলে বাঘের ছা বেরোবে
করবে ঘরের কাম।
সন্ধ্যা সকাল যখন দেখো
দিচ্ছে ডিমে তা
ডিম ফুটে আজ বের হয়েছে
লম্বা দুটো পা।
উল্টে দিয়ে পানির কলস
উল্টে দিয়ে হাড়ি
আজব দু’পা বেড়ায় ঘুরে
গাঁয়ের যত বাড়ি।
সপ্তা বাদে ডিমের থেকে
বের হল দুই হাত
কুপি জ্বালায় দিনের শেষে
যখন নামে রাত।
উঠোন ঝাড়ে বাসন মাজে
করে ঘরের কাম
দেখলে সবাই রেগে মরে
বলে এবার থাম।
চোখ না থাকায় এ দুর্গতি
ডিমের কি দোষ ভাই
উঠোন ঝেড়ে ময়লা ধুলায়
ঘর করে বোঝাই।
বাসন মেজে সামলে রাখে
ময়লা ফেলার ভাঁড়ে
কাণ্ড দেখে টাট্টু বাড়ি
নিজের মাথায় মারে।
শিঙের দেখা মিলল ডিমে
মাস খানিকের মাঝে
কেমনতর ডিম তা নিয়ে
বসলো বিচার সাঁঝে।
গাঁয়ের মোড়ল পান চিবিয়ে
বলল বিচার শেষ
এই গাঁয়ে ডিম আর রবে না
তবেই হবে বেশ।
মনের দুখে ঘর ছেড়ে ডিম
চলল একা হেঁটে
গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে
ডিম গেলো হায় ফেটে।
গাঁয়ের মানুষ একসাথে সব;
সবাই ভয়ে হিম
ডিম ফেটে যা বের হল তা
হাট্টিমাটিম টিম।
হাট্টিমাটিম টিম-
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম।
References
- বাংলা কোরা
- ড. মোহাম্মদ আমীন
- ফেইসবুক
Featured Image: বাংলা কোরা, দ্যা গ্রেট বাংলা টিভি