অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf download। শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
- বই: অসমাপ্ত আত্মজীবনী
- লেখক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
- ক্যাটাগরি: রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- ভাষা: বাংলা
- ফরম্যাট: Free Download (ফ্রি ডাউনলোড)
- প্রকাশনী: দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড(ইউ পি এল)
- প্রকাশকাল: ২০১৭ (তৃতীয় তম প্রকাশ)
- মোট পেজ: ৩২৯ টি
- ফাইল সাইজ: এম্বি
অসমাপ্ত আত্মজীবনী pdf বইয়ের প্রথম কিছু অংশ পড়ুন।
আমি মুখে যা বলি, তাই বিশ্বাস করি। আমার পেটে আর মুখে এক কথা।
আমি কথা চাবাই না, যা বিশ্বাস করি বলি। সেজন্য বিপদেও পড়তে হয়, এটা আমার স্বভাবের দোষও বলতে পারেন, গুণও বলতে পারেন।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২১৮ পৃষ্ঠা) থেকে উপরের সংলাপটি কোট করে দিলাম। বিশেষ কারণটি এখানে অব্যক্তই থাক; বরং আমার প্রিয় একটি সংলাপ’ বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে। পড়ছি: বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। অনেককাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ইমার্চের ভাষণ শুনে যেমনটি শিহরিত হয়েছিলাম, তেমনি বইটি পড়ার সময়ও বুকের ভেতর এক ধরনের শিহরন অনুভব করেছি। চোখের পাতায় আলগোছে মহান মানুষটি ভেসে উঠেছে। স্পর্শ পেয়েছি দরাজ কন্ঠের অধিকারী পাশে বসে আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছেন। যেমন করে মাঠের রাখাল বালক আর কৃষকের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়। এসময় অনুভব করে নিয়েছিÑ একজন হৃদয়বান মানুষের অন্তর আত্মার কথকতা।
সাধারণত বিখ্যাত লেখক বা বিখ্যাত কোনো বইয়ের নাম জেনেই পড়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠি, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ’র ক্ষেত্রে তেমনটি মাথায় ছিল না। যখন বইটি পড়া শুরু করলাম, তখনো মাথায় ছিল যে, আমি বঙ্গবন্ধুর নিজের বলা কথা জানতেই বইটি পড়ছি। কিন্তু কিছুসময় পড়েই আমি স্তম্ভিতই হয়ে গেলাম বঙ্গবন্ধুর লিখনি ধার দেখে। মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়ানো মানুষটির কলম-কালির মহিমা পড়ে। একজন রাহনৈতিক নেতার লিখিত ভাষা এতো সাবলীল, গতিময়! যেন লিখিত কোনো বই পড়ছি না, বইটির লেখক নিজে আমার সাথে কথা বলছেন। যে কথায় কোনো ভানটান নেই, চালাকী নেই, রং নেই একটুও; বাংলার মাটিঘেঁষা মানুষ তার ঘরের আঙিনায় বসে তার কাছের মানুষের কাছে যেভাবে হৃদয়ে কথা বলে, যা হৃদয়েরই রস-রসায়নে হয়ে ওঠে পাঁচালী-ঠিক সেই ভাবে লিখেছেন বইটি। পৃথিবীর সব লিখিত ভাষা মাত্রই সাজানো, আর্টিফিশিয়াল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু লেখক ছিলেন না বলেন এমন সরল নির্ভেজাল কথাগুলো লিখতে পেরেছিলেন। পেরেছিলেন নিজের সম্পর্কেও সরল-সোজা ভাবে বলতে:
আমি মুখে যা বলি, তাই বিশ্বাস করি। আমার পেটে আর মুখে এক কথা।
আমি কথা চাবাই না, যা বিশ্বাস করি বলি। সেজন্য বিপদেও পড়তে হয়, এটা আমার স্বভাবের দোষও বলতে পারেন, গুণও বলতে পারেন।’’ (বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ২১৮ পৃষ্ঠা থেকে )
যেমন সহজেই বাংলার মানুষের সম্পর্কে তিঁনি বলতে পেরেছিলেন:
অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে । ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী; পৃষ্ঠা, ৪৮)
৩২৯ পৃষ্ঠার বইটা পড়তে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের নিখাদÑঅকপট আন্তরিকতা আমায় গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। বাঙালি সংসারে আন্তরিক মানুষ আমি অনেকই দেখেছি। সম্ভবত প্রত্যেক বাঙালিই আন্তরিকÑআমার একান্ত বিশ্বাস। তবে বাঙালির এই সর্বশ্রেষ্ট নেতাটি যে নিখাদ আন্তরিক সে বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ আগেও যেমন ছিলো না, বইটি পড়ে তো সে ধারণা পাকাপোক্ত হয়েছে। বইটির প্রতিটি বাক্যে তাঁর দরদ দারুণ স্পষ্ট করে অনুভব করেছি। বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতা, হৃদয়মাধুর্য অনুভব করার জন্য তাঁর দিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার বর্ণনার উদাহরণ হিসেবে এখানে তুলে দিতে পারি…
… আমাদের সময় হয়ে এসেছে, ফিরতে হবে। চৌধুরী সাহেব তাড়া দিলেন। আমরাও গাড়িতে উঠে বসলাম। আগ্রায় ফিরে এসেই মালপত্র নিয়ে রওয়ানা করলাম তুন্দলা স্টেশনে। এসে দেখি বংলাদেশের অনেক সহকর্মীই এখানে আছেন। অনেক ভিড়। মালপত্র চৌধুরী সাহেবের প্রথম শ্রেণীর গাড়িতে ফেলে আমরা তাড়াতাড়ি উঠে পড়তে চেষ্টা করলাম। যখন সকলেই উঠে গেছে ট্রেনে, আমি আর উঠতে না পেরে এক ফার্স্ট ক্লাসের দরোজার হাতল ধরে দাঁড়ালাম। আমার সাথে আরেক বন্ধু ছিল। পরের স্টেশনে যে কোনও বগিতে উঠে পড়ব। অনেক ধাক্কাধাক্কি করলাম, প্রথম শ্রেণীর ভদ্রলোক দরোজা খুললেন না। ট্রেন ভীষণ জোরে চলছে, আমাদের ভয় হতে লাগল, একবার হাত ছুটে গেলে আর উপায় নাই। আমি দুই হাতলের মধ্যে দুই হাত ভরে দিলাম, আর ওকে বুকের কাছে রাখলাম। মেলট্রেন-স্টেশন কাছাকাছি হবে না। আমাদের কিন্তু অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল।বাতাসে হাত-পা অবশ হতে চলেছে। আর কিছু সময় চললে আর উপায় নাই। কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ ট্রেন থেমে গেল। আমরা নেমে পড়লাম।’
(বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী; পৃষ্ঠা-৬০-৬১)
এছাড়া আরো নানান বিষয় বঙ্গবন্ধু তার লেখনীতে তুলে এনেছেন। প্রতিটি ঘটনাই মানবিক হিসেবে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী কেবল একটা সময়ের নিছক রাজনৈতিক ভাষ্য বলে মনে হয় না। একজন মানুষের বুকের ভেতরের আকাশটা ছবি দেখতে পাওয়া যায়; শুধু ছবি কেন সব খোঁজ-খবরই পাওয়া যায় । পরিশেষে এটুকু বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু নির্জন কারাকক্ষে বসে অমূল্য কিছু লেখা পড়ে আমরা এক হৃদয়বান বাঙালি হৃদয়ের আঁকিবুকির খোঁজ পাই।
লেখক পরিচিতি:
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন আদর্শ দেশনেতা ও রাজনীতিবিদই নন, তাঁর ছিলো উল্লেখযোগ্য সাহিত্য প্রতিভা। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে যিনি সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার ফলে তাঁকে অভিহিত করা হয়ে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে। মহান এই ব্যক্তির জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে গোপালগঞ্জেই, যার ফলে শিক্ষাজীবনের সূত্রপাতও সেখানে। ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। স্কুল-কলেজের লেখাপড়া শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন, কিন্তু ছাত্র রাজনীতি ও বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে যাওয়ায় তিনি আর পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি। পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার্থে তিনি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন, যার ফলে সরকারের রোষানলে পড়েন। রাজনৈতিক কারণে তিনি দিনের পর দিন জেল খেটেছেন। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর প্রারম্ভে তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়। এরপর দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে এসে তিনি দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এতকিছুর পরও বঙ্গবন্ধু সাহিত্যকর্মে অংশ নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বই ২টি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বই সমূহ মূলত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এই দুটি বই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বই সমগ্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই দুটি বই-ই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার উদ্যোগে। বঙ্গবন্ধু নিজে তেমন বই রচনা না করলেও তাঁকে নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই এর মধ্যে শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, পীর হাবিবুর রহমানের ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’, ফারুক চৌধুরীর ‘স্মরণে বঙ্গবন্ধু’, এম আর আখতার মুকুলের ‘মুজিবের রক্ত লাল’, শেখ শাহাদাতের ‘বিপ্লবী নেতা শেখ মুজিব’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা কতিপয় সেনাসদস্যের হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি সম্পর্কে পাঠকদের মন্তব্য।
Farhad Reza বলেছেন: অসমাপ্ত আত্মজীবনী; একজন শেরপার সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান (বুক রিভিউ)
“বন্ধুবান্ধবরা বলে তোমার জীবনী লেখো। সহকর্মীরা বলে রাজনৈতিক জীবনের কাহিনীগুলো লিখে রাখো, কাজে লাগবে।” এভাবেই শুরু হয়েছে এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী। মধুমতি তীরের জনপদ থেকে উঠে আসা একজন মানুষের গল্প, একজন রাষ্ট্রনায়কের আত্মজীবনী তার বংশীয় পরিচয় এবং নাটকীয় কথনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাঠকের যাত্রা। প্রথমেই যে প্রশ্নটি চলে এসেছিলো, বইটি কি আদৌ শেখ মুজিবুর রাহমানের লিখা? তাহলে এতোদিন কোথায় ছিলো? কিংবা, এর আবিষ্কারের নেপথ্যকাহিনী কী ছিলো? শুরু ভূমিকাতে সেই প্রশ্নর উত্তর মিলে যায়। উদ্ধৃত করছি।
“২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে। ”
সামনে এগুতে থাকি। দেখতে থাকি কাগজের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে থাকা স্থির সেলুলয়েডে গড়িয়ে চলা বঙ্গবন্ধুর জীবন। বইটির ভাষা কিংবা বিষয় আত্মজীবনীধর্মী হলেও, লেখকের কলমের আঁচড়ে উঠে এসেছে তৎকালীর সময়ের নানান প্রেক্ষাপট।
সাথে পেয়ে যাই লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতির সংক্ষিপ্ত খতিয়ান।
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় সমৃদ্ধ হয়েছে ৩৪৫ পৃষ্টার এই বইটি।
এতে আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
বইটা শেষ করতে হলো বেশ ভালো রকমের অতৃপ্তি নিয়ে। অতৃপ্তির কারণ আসলে নামেই বোঝা যায় – অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, কোনো উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারেই হুট করে শেষ হয়ে গেল বইটা। এটা থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিনত বয়সের রাজনৈতিক দর্শনের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না । যে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছিলেন তার শুরুর সময়টার কিছু ধারনা পাওয়া যাবে মাত্র। গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী সমাজ সচেতন কিশোর শেখ মুজিবের পরিণত বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার কিছুটা আভাস পাই। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় কিছুই আমরা পাই না।
তবে বইটা পড়ে ব্যক্তি মুজিবকে হয়তো অনেকখানিই উদ্ধার করা যায়। তার রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা, সংগ্রাম সবকিছুরই অনেক ধারনা পাওয়া যায়। যে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য যেই মুসলিম লীগে সমর্থন করে আন্দোলন করেছিলেন পরে সেই মুসলিম লীগের অত্যাচার এবং দুঃশাষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিরোধী দল গঠন করলেন এবং হয়ে গেলেন মুসলিম লীগ আর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ শত্রু!
আমি বইটি থেকে মূলত সেই সময়ের শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে চেষ্টা করেছি। পাতার পর পাতা থিসিস লিখে আর গবেষণা করে মাঠের রাজনীতিতে যারা কিছুই করতে পারেন নি তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন নি তিনি। তিনি কাজ করতে করতে শিখেছেন, ভুল হলে স্বীকার করেছেন, সংশোধনের চেষ্টা করছেন। বলেছেন এভাবে, ”আমার যদি কোনো ভুল হয় বা অন্যায় করে ফেলি, তা স্বীকার করতে আমার কোনোদিন কষ্ট হয় নাই। ভুল হলে সংশোধন করে নেব, ভুল তো মানুষেরই হয়ে থাকে। … … আমি অনেকের মধ্যে দেখেছি, কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। … … আমি চিন্তা ভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয় সংশোধন করে নেই। কারণ যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।”
আন্দোলন আর সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে সেই সময়কার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতার সাথে বিভিন্ন তাঁর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব নেতাদের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ে ঘুরে ফিরে এসেছে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা, যাঁর হাত ধরে তিনি রাজনীতি শিখেছেন। লেখক একেবারে শুরুর দিকেই বলছেন, ”ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।”
বইয়ের শুরুতে শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকা এবং বইয়ের বিভিন্ন অংশে জুড়ে দেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে লেখা পান্ডুলিপির টুকরো ছবি বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। বইয়ের আনুষ্ঠানিক শুরু পূর্বের একটি উদ্ধৃতি তুলে দিচ্ছি। যা থেকে আন্দাজ করা যায়, একজন ব্যক্তি মুজিবকে কতোটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
“একদিন সকালে আমি ও রেনু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম , হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল ” হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর “আব্বা আব্বা ” বলে ডাকে . কামাল চেয়ে থাকে , একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে , হাচু আপা হাচু আপা , তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি….! আমি আর রেনু দুজনেই শুনলাম . আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা !
কামাল আমার কাছে আসতে চাইতো না, আজ গলা ধরে পড়ে রইলো . বুঝতে পারলাম , এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না . নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায় . আমি যখন জেলে যাই ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস . রাজনৈতিক কারনে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মিয়স্বজন ছেলেমেয়ের কাছ থেকে দুরে রাখা যে কতো বড় জঘন্য তা কে বুঝবে ? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়..”
যে জীবন ছিলো মহীরুহের, সে জীবনের আত্মজীবনী অসমাপ্ত থেকে গেলো। হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখি নি। এই অসমাপ্ত বইটি আমাকে মুজিবের ভেতরের ব্যক্তিমুজিবকে দেখার সুযোগ করে দেয়। আমি বঙ্গবন্ধুর পূর্ণাঙ্গ আত্মজীবনী পড়বার অপেক্ষায় থাকি..।
তথ্যসূত্র সাহায্য:
অসমাপ্ত আত্মজীবনী ; শেখ মুজিবুর রহমান ( দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড(ইউ পি এল) )
গুডরিডস.কম ( বই বিষয়ক অন্যতম বৃহৎ ওয়েবসাইট )
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট ( লিফলেট/প্রচারণা )
MD Mahamud Hasan tushar বলেছেন: নিরপেক্ষতার মৌলিক দলিল ‘তিনি কখনো আপোস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ।’
Sudipto Chakraborty বলেছেন: তিনি রাজনীতির মানুষ, লেখক নন। শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে, ভাষা আর অলংকারে, উপমা আর রূপকের কারুকার্যে মন ভোলানো লেখনি তাঁর ছিল না। কিন্তু তারপরেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। সহজ মানুষের সহজ বাক্য, সহজ শব্দ, সহজ ভাষা, হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা, ঠিক তাঁর ভাষণগুলোর মতোই। বন্ধুবান্ধব আর স্ত্রীর অনুরোধে জেলখানার বসে তিনি লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁর অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত গল্প। বইয়ের একেবারে শুরুতেই সরল স্বীকারোক্তি, ”লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”
‘শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।’ বইটিকে ফ্ল্যাপে এভাবেই পরিচিত করে দেয়া হয়েছে। লেখক যখন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তখন এর চেয়ে অধিক ভূমিকার আর কী প্রয়োজন থাকতে পারে!
বইটা শেষ করতে হলো বেশ ভালো রকমের অতৃপ্তি নিয়ে। অতৃপ্তির কারণ আসলে নামেই বোঝা যায় – অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, কোনো উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারেই হুট করে শেষ হয়ে গেল বইটা। এই অঞ্চলের রাজনীতি যখন ধীরে ধীরে নানা কুশীলবের অংশগ্রহণে জটিল হয়ে উঠছে, পশ্চিম পাকিস্তানি আর তার ধামাধরা স্বার্থান্বেষী বাঙ্গালিরা যখন সদ্য স্বাধীন দেশে ইংরেজ আমলের ঔপনিবেশিক পন্থা টিকিয়ে রেখে নতুন ভাবে শোষণের জাল বিস্তার করছে, গোপালগঞ্জের কিশোর শেখ মুজিব যখন একটু একটু করে গোটা বাংলাদেশের শেখ মুজিব হয়ে উঠছেন ঠিক তখনই শেষ হয়ে গেল বইটা।
বইটির রচনাকাল ১৯৬৭ সাল হলেও এই বইয়ে মূলত উঠে আসার সুযোগ পেয়েছে লেখকের রাজনৈতিক জীবনের শৈশব থেকে রাজনৈতিক যৌবনের শুরুর দিককার অংশ। পাকিস্তানের আন্দোলনের সময়কার রাজনীতি সচেতন এক কিশোর মুজিব থেকে ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের কড়চা পর্যন্ত মূলত এই বইয়ের কলেবর। বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের খুব সামান্য অংশের সাথেই, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে একেবারে শুরু দিকের অংশের সাথেই কেবল পরিচিত করায় এই বইটি। এখানে গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী সমাজ সচেতন কিশোর শেখ মুজিবের পরিণত বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার কিছুটা আভাস পাই। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় কিছুই আমরা পাই না। কিন্তু এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটার সাথে, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন আর উপলব্ধির সাথে, তাঁর চেতনা আর স্বপ্নের সাথে, তাঁর বোধ আর বোধের বিবর্তনরেখার সাথে পরিচিত হয়ে উঠি। কোনো রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট বা বিশাল প্রভাবশালি ধনাঢ্য কোনো পরিবারে জন্ম নেন নি তিনি। গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ পরিবারে জন্ম নেয়া একজন কীভাবে হয়ে উঠলেন বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক? যেসব নেতাদের কাছে রাজনীতির পাঠ নিয়ে কিশোর মুজিব উঠে এসেছেন ধীরে ধীরে, মঞ্চের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে কীভাবে তিনি তাঁদের ছাপিয়ে আরও অনেক উপরে উঠে গেলেন? কীভাবে হয়ে উঠলেন নেতাদের নেতা? সাম্প্রদায়িকতাকে উপজীব্য করে শুরু হয়েছিল যে আন্দোলন, সেই পাকিস্তান আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে যাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা তিনি কীভাবে আর কেন হয়ে উঠলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলার গণমানুষের নেতা?
শেখ মুজিব রাজনীতি করেছেন মূলত মানুষের জন্য, আর কিছু না বোঝা গেলেও এইটুকু অন্তত বুঝতে পারা যায় এই তিনশ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বই থেকে। আর এই জন্যই তাঁর কোনো পিছুটান ছিল না, স্বার্থের জন্য আপোষের মনোভাব ছিল না, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার দায় ছিল না। যা করেছেন নিজে বিশ্বাস করে করেছেন। এজন্যে বারবার তিনি উল্লেখ করেছেন তিনি গোপন রাজনীতি বা পালিয়ে থেকে বিবৃতি দেয়ার রাজনীতি পছন্দ করতেন না। বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি শোষক শ্রেণির দ্বারা। পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সেই আন্দোলনের ফসল পাকিস্তানে একেবারে শুরু থেকেই তিনি জেলের ভেতর কাটিয়েছেন অধিকাংশ সময়। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তা তিনি পাননি, বরং সাদা চামড়ার বদলে কালো চামড়ার শোষণ পেয়েছে জনগণ। দেখলেন, শাসকের নাম বদলেছে রঙ বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায় নি। যাদের সাথে নিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকের বিপক্ষেই তাই তাঁর আর তাঁর সমমনাদের নতুন সংগ্রাম শুরু হলো।
দুইশ বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এই অঞ্চলের মুসলমান আর হিন্দুর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরাজমান যে অসন্তোষ তা কেবল বৃদ্ধিই করেছিল। তার চূড়ান্ত রূপ পায় সম্ভবত যখন ধর্মের নামে দেশভাগের আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ল ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এই অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য উন্নতির আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল কিনা, সেই বিতর্ককে এই লেখায় সাবধানে পাশ কাটিয়েই বলা যায়, কোনো সাম্প্রদায়িক আন্দোলন সাধারণত কোনো ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। দেশভাগ আর তার আগে পরের সময়ের কথা বার বার উঠে এসেছে। উঠে এসেছে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার কথা, কখনও ঢাকায়, কখনও কোলকাতায়, কখনও এপারে, কখনও ওপারে। কখনও রাজনৈতিক নেতারা হিন্দু-মুসলিম অসন্তোষ উস্কে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। এখনকার মতোই ইমাম, হুজুর আর পীরসাহেবেরা অংশ নিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুঘটক হিসেবে। জনগণকে ধর্মের নামে আলাদা করতে চেয়েছেন বারবার, সাম্প্রদায়িক নেতা আর অনেক ধর্মগুরু। এইসব ঘটনাই সম্ভবত ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান আন্দোলনের একজন নিবেদিত কর্মী শেখ মুজিবকে বুঝতে শিখিয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ না গড়তে পারলে আসলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
পাকিস্তান আমল থেকেই শুরু হয় যে কোনো ইস্যুতে ভারত আর ইসলাম ধ্বংসের জুজু দেখানো শুরু হয়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি সেই রাজনীতি করে যাচ্ছে এখনও সেই পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভূত। ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে গুলি চালানোর পরে সরকার থেকে বলা হয়, ”হিন্দু ছাত্ররা কলকাতা থেকে এসে পায়জামা পরে আন্দোলন করেছে।” ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করেছেন পাকিস্তান আসলে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। দুঃখ করেই তিনি লিখেছেন, ”দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান আন্দোলনের যারা বিরোধিতা করেছিল, এখন পাকিস্তানকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার ধুয়া তুলে রাজনীতিকে তারাই বিষাক্ত করে তুলেছে। মুসলিল লীগ নেতারাও কোনো রকম অর্থনৈতিক ও সমাজনৈতিক প্রোগ্রাম না দিয়ে একসঙ্গে যে স্লোগান নিয়ে ব্যস্ত রইল, তা হল ‘ইসলাম’।” অবাক লাগে, ধর্ম বেঁচে যারা মূলত জীবন ধারণ করে, তাদের চারিত্রিক গুণাবলি এত বছর পরেও খুব একটা বদলায় নি। যুক্তফ্রন্টের আর মুসলিম লীগের নির্বাচনের সময় মুজিবের সাথে জনপ্রিয়তায় টেক্কা দিতে না পেরে ঠিক এখনকার মতোই ধর্মের ট্রাম্পকার্ড খেলার চেষ্টা করে মুসলিম লীগ। লেখকের ভাষায়, ”… মুসলিম লীগ যখন দেখতে পেলেন তাদের অবস্থা ভালো না, তখন এক দাবার ঘুঁটি চাললেন। অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মাওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। … … এক ধর্মসভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, ‘আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে’। সাথে শর্ষিনার পীর সাহেব, বরগুনার পির সাহেব … … সবাই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপণতা করলেন না।” কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য রাজনীতি করতে করতে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বাঙালিকে এইভাবে ধোকা দেওয়া যাবে না।
আমি বইটি থেকে মূলত সেই সময়ের শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে চেষ্টা করেছি। পাতার পর পাতা থিসিস লিখে আর গবেষণা করে মাঠের রাজনীতিতে যারা কিছুই করতে পারেন নি তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন নি তিনি। তিনি কাজ করতে করতে শিখেছেন, ভুল হলে স্বীকার করেছেন, সংশোধনের চেষ্টা করছেন। বলেছেন এভাবে, ”আমার যদি কোনো ভুল হয় বা অন্যায় করে ফেলি, তা স্বীকার করতে আমার কোনোদিন কষ্ট হয় নাই। ভুল হলে সংশোধন করে নেব, ভুল তো মানুষেরই হয়ে থাকে। … … আমি অনেকের মধ্যে দেখেছি, কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। … … আমি চিন্তা ভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয় সংশোধন করে নেই। কারণ যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।”
আন্দোলন আর সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে সেই সময়কার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতার সাথে বিভিন্ন তাঁর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব নেতাদের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ে ঘুরে ফিরে এসেছে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা, যাঁর হাত ধরে তিনি রাজনীতি শিখেছেন। লেখক একেবারে শুরুর দিকেই বলছেন, ”ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।” বার বার বিভিন্ন জায়গায় তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। কিন্ত অবাক লাগে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একেবারে শুরুর দিকে যখন শেখ মুজিব একাবেরাই বিশিষ্ট কেউ হয়ে ওঠেন নি, তখনও তাঁর নিজের মত আর বিশ্বাসের প্রতি ছিল ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাস। এক সভার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলছেন, ”তিনি আনোয়ার সাহেবকে একটা পদ দিতে বললেন। আমি বললাম কখনোই হতে পারে না। সে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোটারি করেছে, ভালো কর্মীদের জায়গা দেয় না। কোনো হিসাব নিকাশ কোনোদিনও দাখিল করে না। শহীদ সাহেব আমাকে বললের Who are you? You are nobody. আমি বললাম, If I am nobody, then why you have invited me? You have no right to insult me. I will prove that, I am somebody. Thank you, sir. I will never come to you again.” অবাক হয়ে ভাবতে হয়, কতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকলে একটা ছোট্ট মহকুমার সামান্য একজন কিশোর রাজনীতিবিদ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতার সামনে এভাবে নিজের মতামত দিতে পারে!
পশ্চিম পাকিস্তানি তথা অবাঙ্গালি নেতাদের মধ্যে একমাত্র জিন্নাহর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল বলে মনে হয়েছে। বাকি অধিকাংশ অবাঙ্গালি নেতা মূলত স্বার্থান্বেষী আর ক্ষমতালিপ্সু মনোভাবই ফুটে উঠেছে লেখার বিভিন্ন অংশে। ধীরে ধীরে সম্ভবত তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধামাধরা, মূলত ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁরাই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় নেজামে ইসলামের নেতাদের ক্ষমতালিপ্সু আদর্শহীন মনোভাব তাঁকে পীড়িত করে। কিন্তু এইসব শিক্ষাই তাকে ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির গুরুত্ব আরও ভালোভাবে উপলব্দি করতে উদ্বুদ্ধ করে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তিনি মূল্যায়ন করছেন এভাবে, ”এই নির্বাচনে একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে যে, জনগণকে ‘ইসলাম ও মুসলমানের নামে’ স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যায় না। ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানরা তাঁদের ধর্মকে ভালোবাসে; কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবে না এ ধারণা অনেকেরই হয়েছিল।”
সেই সময়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা ভাসানী, যাঁকে বইয়ে বিভিন্ন জায়গায় লেখক মূলত মাওলানা সাহেব হিসেবে সম্মোধন করেছেন, তাঁর প্রতি বিভিন্ন জায়গায় ভরসা আর শ্রদ্ধার প্রকাশ থাকলেও তাঁর কিছু কর্মকাণ্ডে লেখকের বিরক্তিও চাপা থাকেনি। ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তাঁর নিকটবর্তী সময়কাল ছাড়া মাওলানা ভাসানীর ব্যাপারে খুব বেশি জানাশোনা আমার নেই। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তার নিকট অতীতে, গুরুত্বপূর্ণ সময় আর সিদ্ধান্তের সময় উধাও হয়ে যাওয়ার বা দায়িত্ব না নেয়ার কথা পড়েছি। মাওলানা ভাসানীর এই রকম কিছু কর্মকাণ্ডে নিজের বিরক্তি বেশ ভালোভাবেই প্রকাশ করেছেন,”মাওলানা ভাসানীর এই দরকারের সময় আত্মগোপনের মনোভাব কোনোদিন পরিবর্তন হয় নাই। ভবিষ্যত অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ হয়েছে।” এখানেই সম্ভবত পার্থক্য গড়ে উঠেছে। একজন যিনি গণমানুষের নেতা হয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে গেছেন, রাজনৈতিক কেবলা বা অন্য কোনো কারণে নিজের হাতে দায়িত্বের কালিমা লাগাতে চান নি, আর অন্যজন সামান্য এক মহকুমার সচেতন কিশোর রাজনীতিবিদ থেকে হাতে কলমে কাজ করে, ভুল করতে করতে হয়ে উঠেছেন গণমানুষের নেতা, বাঙ্গালির আশা আকাঙ্খার প্রতীক।
মূলত সাম্যে বিশ্বাস বিশ্বাস করতেন তিনি, বিশ্বাস করতেন গণমানুষের অধিকারে। সরাসরি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি তিনি করেন নি। বিভিন্ন সময় তাঁর লেখায় মনে হয়েছে তিনি অতি বিপ্লবীদের পছন্দ করতেন না তিনি। কারণ এই অঞ্চলের অতি বিপ্লবীদের অনেকেই ছিল মূলত খাতা কলমের রাজনীতিবিদ আর জনবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে তিনি চেয়েছেন জণগণকে নিয়ে প্রকাশ্য নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে। নিজে সরাসরি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন না করলেও তিনি মূলত সমাজতন্ত্রের মূলনীতি অর্থাৎ সাম্যে বিশ্বাস করতেন। প্রায় একই সময় স্বাধীন হওয়া কম্যুনিস্ট নতুন চীন সফরে গিয়ে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন আর উপলব্ধি করেছেন নেতাদের স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপে কীভাবে জণগনের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে। চীন সফরের কথা লিখতে গিয়ে সমাজতন্ত্রের প্রতি তার মনোভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে বলছেন, ”আমি নিজে কম্যুনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। এঁকে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ায় মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না।” আরও বলছেন এভাবে, ”আওয়ামী লীগ ও তার কর্মীরা যে কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক নেতা ও কর্মী আছে যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে; এবং তারা জানে সমাজতন্ত্রের পথই একমাত্র জনগণের মুক্তির পথ। ধনতন্ত্রবাদের মাধ্যমে জনগণকে শোষণ করা চলে। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনোদিন সাম্প্রদায়িকিতায় বিশ্বাস করতে পারে না। তাদের কাছে মুসলমান, হিন্দু, বাঙালি, অবাঙালি সকলেই সমান।” সমাজতন্ত্রের প্রতি এই দূর্বলতাই হয়ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে দেশে তাঁকে বাকশাল গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
“মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না”- চোখের পানিতে এই প্রতিজ্ঞা যিনি করেছিলেন, বাংলার মানুষের জন্য যিনি জেল খানায় পার করেছেন অর্ধেক সময়, বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গোপালগঞ্জের কিশোর শেখ মুজিব যখন ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠছেন, ঠিক তখনই সমাপ্ত হল তাঁর – অসমাপ্ত আত্মজীবনী। আর তাঁর আত্মজীবনীর মতো জীবনটাকেও অসমাপ্ত করে দিল এই বাংলারই কিছু মানুষ
Mahbub Zaman বলেছেন: আমি কয়েকদিন বাড়িতে ছিলাম। আব্বা খুবই দুঃখ পেয়েছেন। আমি আইন পড়ব না শুনে বললেন, “যদি ঢাকায় না পড়তে চাও, তবে বিলাত যাও। সেখান থেকে বার এট ল’ ডিগ্রি নিয়ে এস। যদি দরকার হয় আমি জমি বিক্রি করে তােমাকে টাকা দিব।” আমি বললাম, “এখন বিলাত গিয়ে কি হবে, অর্থ উপার্জন করতে আমি পারব না। আমার ভীষণ জেদ হয়েছে মুসলিম লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন দেখি তার উল্টা হয়েছে। এর একটা পরিবর্তন করা দরকার। জনগণ আমাদের জানত এবং আমাদের কাছেই প্রশ্ন করত। স্বাধীন হয়েছে দেশ, তবু মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর হবে না কেন? দুর্নীতি বেড়ে গেছে, খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। বিনা বিচারে রাজনৈতিক কর্মীদের জেলে বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে মুসলিম লীগ নেতারা মানবে না।
পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প কারখানা গড়া শুরু হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। রাজধানী করাচি। সব কিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব বাংলায় কিছু নাই। আব্বাকে সকল কিছুই বললাম। আব্বা বললেন, “আমাদের জন্য কিছু করতে হবে না। তুমি বিবাহকরেছ, তোমার মেয়ে হয়েছে, তাদের জন্য তো কিছু একটা করা দরকার।” আমি আব্বাকে বললাম, “আপনি তাে আমাদের জন্য জমিজমা যথেষ্ট করেছেন, যদি কিছু না করতে পারি, বাড়ি চলে আসব। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া চলতে পারে না। আমাকে আর কিছুই বললেন না। রেণু বলল, “এভাবে তােমার কতকাল চলবে।” আমি বুঝতে পারলাম, যখন আমি ওর কাছে এলাম । রেণু আড়াল থেকে সব কথা শুনছিল। রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্যে টাকা পয়সা জােগাড় করে রাখত যাতে আমার কষ্ট না হয়।
Md. Anisur Rahman বলেছেন: একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো নেতা, সর্বোপরি একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদ হওয়ার সব উপাদন এখানে আছে। সব মানুষের জন্য বইটি আর রাজনীতি যারা করেন তাদের জন্য তো বলার অপেক্ষা রাখে না!
অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি pdf download করুন নিচের লিংক থেকে।
প্রিয় পাঠক অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি pdf download করতে আমরা কখনোই আপনাদের উৎসাহীত করছি না। আমাদের অনুরোধ থাকবে অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি আপনার নিকটস্থ লাইব্রেরী অথবা অনলাইন বইয়ের দোকান থেকে হার্ডকপি ক্রয় করুন এতে করে সম্মানিত লেখকগন তাদের লেখার প্রতি আরো উৎসাহিত হবেন।
আর হ্যা বন্ধুরা আপনারা চাইলেই বইটি এই অনলাইন শপ গুলো থেকে খুব সহজেই ক্রয় করতে পারবেন।
রকমারি: https://www.rokomari.com/book/91586/ausamapta-atmajiboni-sulov-