যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২২ যাকাত হিসাব কিভাবে বের করবেন তা নিয়ে মুসলিমদের মাঝে অনেক ধরনের প্রশ্ন ঘোরপাক করে। তাই আজকে যাকাত নিয়ে কিছু কমন জিজ্ঞাসা নিয়ে আজকের এই লেখাটি লেখা হয়েছে।
যাকাত কাকে বলে?
আল্লাহতালা আপনাকে যে ধন-সম্পদ দান করেছেন তা যদি নেসাব পরিমান হয় তাহলে সেখান দেখে নির্ধারিত কিছু অংশ গরীবেদেরকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার নামই হলো যাকাত।
যাকাত কত হিজরীতে ফরজ হয়?
যাকাত ফরজ করা হয়েছিলো দ্বিতীয় হিজরী থেকে।
যাকাত কাদের উপর ফরজ?
- যার মালিকানায় সাড়ে সাত ভড়ি সোনা রয়েছে।
- যার মালিকানায় সাড়ে বায়ান্ন ভড়ি রুপা রয়েছে।
- যার মালিকানায় কিছু সোনা ও কিছু রুপা আছে, তবে কোনো একটি পূর্ণ নিসাব পরিমান নয়। তবে সোনা ও রুপা একত্রে করলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সমান হয়।
- যার মালিকানায় কিছু সোনা ও কিছু রুপা এবং কিছু নগদ টাকা আছে তবে কোন একটি পূর্ণ নিসাব পরিমাণ নয়। তবে সোনা, রুপা, নগদ টাকা একত্রে করলে সাড়ে বায়ান্ন ভড়ি রুপার মূল্যের সমান হয়।
- যারা কাছে কোন সোনা বা রুপা নেই, কিন্তু রুপার নিসাবের সম পরিমাণ নগদ টাকা নিজ হাতে বা ব্যাংকে অথবা কারো কাছে পাওনা আছে এবং তা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা আছে।
- কারো কাছে সোনা, রুপা বা নগদ অর্থ কিছুই নেই কিন্তু রুপার নিসাব পরিমাণ ব্যবসায়িক পণ্যদ্রব্য আছে।
- মহিলাদের ব্যবহৃত সোনা বা রুপার অলংকার, যা নিসাব পরিমাণ হয়।
- এক কথায় যাকাতযোগ্য সম্পদের মোট মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমান মূল্য হয় তবে যাকাত দিতে হবে।
উল্লেখিত সম্পদ কোন ব্যক্তির নিকট যদি একবছর অতিবাহিত হয় তাহলে তার উপর যাকাত দিতে হবে।
যাকাত কখন ফরজ হয়?
যাকাত ইসলাম ধর্মের তৃতীয় স্তম্ভ। একজন মুসলিম যদি নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদের মালিক হন তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে।
আপনার যদি কোন ঋণ না থাকে আপনি যদি একজন মুসলিম হন ঋণ থাকলেও তা পরিশোধ করার পর যদি আপনার কাছে নিসাব পরিমান সম্পদ থাকে এবং আপনি যদি কারো দাস না হন তাহলেই আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে।
যাকাত না দেওয়ার শাস্তি
আল্লাহতালা বলেছেনা ”যারা সোনা-রুপা জমা করে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, (অর্থাৎ যাকাত আদায় করে না) কঠিন শাস্তির সু-সংবাদ দিন।
সূরা: তওবা, আয়াত নং ৩৪
আলোচ্য আয়াতে “কঠিন শাস্তির সু-সংবাদ দিন” এই বাক্যটি ব্যঙ্গ করে বলা হয়েছে কেননা শাস্তির ক্ষেত্রে কোন সু-সংবাদ হতে পারেনা।
মূলতা: এখানে যারা যাকাত না দিয়ে সম্পদ জমা করে রাখে তাদের ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ দেয়াই উদ্দেশ্য। তাছাড়াও অপর একটি হাদিসে উল্ল্যেখ আছে যারা ঠিকমতো যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিনে তাদের যাকাত অনাদায়ী সম্পদ (সোনা, রুপা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি) জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার গলায় সেই আগুনের বেড়ি পড়িয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়াও যাকাত আদায় না করলে আরও ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্ল্যেখ রয়েছে।
যাকাত আদায় করলে কি লাভ
আল্লাহ তালা সূরা রোম, আয়াত ৩৯ এ বলেছেন
তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলত আল্লাহতালার কাছে বৃদ্ধি পায় না আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাকো আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুন সম্পদপ্রাপ্ত।
কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ
আপনার কাছে যদি স্বর্ণ ও রৌপ্য (অলঙ্কার) নিসাব পরিমাণ থাকে এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের ওপর হিজরী এক বছর পূর্ণ হয় তাহলে আপনার যাকাত ফরজ হবে।
নগদ অর্থ বলতে আমরা বুঝি টাকা, ডলার, পাউন্ড, ইউরো, রিয়াল ও অন্যান্য মুদ্রা যা নগদ অর্থ হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও চেক, বিল, বিনিয়োগ সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র যার আর্থিক মূল্য রয়েছে তার ওপর যাকাত দিতে হবে তবে তা নিসাব পরিমান হতে হবে।
ব্যবসার পণ্য অর্থাৎ যে সব পণ্য বা বস্তু দিয়ে ব্যবসা করা হয়, যেমন পণ্য, জমি, গাড়ি ও ব্যবসার অন্যান্য সামগ্রী যা কেনাবেচা করা হয়।
চতুষ্পদ প্রাণী বলতে উট, গরু ও ছাগলের যাকাত দিতে হবে। এ সব প্রাণী ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর যাকাতের কথা হাদীসে উল্লেখ নেই।
কিছু ফল ও ফসল হাদীসে যে সব ফসলের নাম উল্লেখ করে যাকাত নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো গম, যব, খেজুর ও কিশমিশ ইত্যাদি।
যাকাত আপনি কাদেরকে দিবেন?
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। এর হক্ব অতি সাবধানতার সাথে যথাযথ ভাবে আদায় করতে হবে।
১) ফকিরঃ জীবন ধারণের জন্য তার যা প্রয়োজন তার কাছে তার থেকে যদি কম থাকে।
২) মিসকীনঃ জীবন ধারণের জন্য তার যা প্রয়োজন তার কাছে তা একেবারেই নেই বা এক বেলার জন্য কিছু আছে। অন্য বেলায় নেই।
৩) যাকাত সংগ্রহকারীঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে।
৪) যাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুঁকেছে অর্থাৎ যে সমস্ত গরীব বিধর্মী যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় বা মুসলিমদের শত্রুর হাত হতে রক্ষা করতে চায় তাদের যাকাত দেওয়া যাবে।
৫) ক্রিতদাস মুক্তিতে অর্থাৎ দাসদের মুক্ত করা, শত্রুর হাতে বন্দী তাদেরও মুক্ত করা ইত্যাদি।
৬) ঋণগ্রস্থ অর্থাৎ সেসব গরীব যারা ঋণ করেছে এবং শোধ করার সামর্থ নেই তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে।
৭) এতিমখানায় দেয়া যেতে পারে। যেখানে গরীব বাচ্চারা লেখাপড়া করে।
৮) মুসাফির অর্থাৎ ঐ মুসাফির যে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বা দেশ হতে অন্য দেশে গেছে কিন্তু টাকার অভাবে নিজ গৃহে ফিরতে পারছে না। তাকে ঐ পরিমান যাকাত দেয়া হবে যাতে নিজের গৃহে ফিরে আসতে পারে।
উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে ২০২২
সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্যের সম্পদ কোন ব্যক্তির নিকট থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে বর্তমানে এই সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার যে বাজার মূল্য সেই পরিমান টাকা যদি কারো কাছে থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ এই ২০২২ সালে যদি কারো কাছে যদি ৬০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে এবং তার উপর যাকাত ফরয হবে।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২২
কোন ব্যক্তির কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ন বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা থাকে অথবা এই পরিমান অর্থ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। যাকাত দেওয়ার নিয়ম হলো আপনার কাছে নিসাব পরিমান সম্পদ বা এর থেকে বেশি সম্পদ থাকলে তাহলে মোট সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ যাকাত হিসেবে আপনাকে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি ৬০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তার ৪০ ভাগ অর্থাৎ ১,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।
যাকাত হিসাব করার নিয়ম ২০২২
আপনার কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ন বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা থাকে অথবা এই পরিমান অর্থ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। এছাড়াও নগদ অর্থ, চেক, বিল, বিনিয়োগ সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র যার আর্থিক মূল্য রয়েছে তার ওপর যাকাত দিতে হবে তবে তা নিসাব পরিমান হতে হবে।
ব্যবসার পণ্য অর্থাৎ যে সব পণ্য বা বস্তু দিয়ে ব্যবসা করা হয়, যেমন পণ্য, জমি, গাড়ি ও ব্যবসার অন্যান্য সামগ্রী যা কেনাবেচা করা হয়।
চতুষ্পদ প্রাণী বলতে উট, গরু ও ছাগলের যাকাত দিতে হবে। এ সব প্রাণী ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর যাকাতের কথা হাদীসে উল্লেখ নেই।
কিছু ফল ও ফসল হাদীসে যে সব ফসলের নাম উল্লেখ করে যাকাত নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হলো গম, যব, খেজুর ও কিশমিশ ইত্যাদি।
অর্থাৎ এসকল অর্থ সম্পদ যদি নিসাব পরিমান বা তার বেশি হয় তাহলে মোট সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ আপনাকে যাকাত দিতে হবে।
যেমন: মোট টাকা ৬০,০০০ /৪০ = ১,৫০০ টাকা
স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২২
স্বর্ণের যাকাত দেওয়ার নিয়ম হলো যদি সাড়ে সাত ভরি বা তার থেকে বেশি পরিমান স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি বা তার থেকে বেশি পরিমান রূপা পূর্ণ এক চন্দ্র বছর কারো কাছে যদি জমা থাকে, তাহলে তাকে মোট মূল্যের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা, শতকরা ২.৫ টাকা করে যাকাত দিতে হবে।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
কোন ব্যক্তির কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ন বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা থাকে অথবা এই পরিমান অর্থ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। যাকাত দেওয়ার নিয়ম হলো আপনার কাছে নিসাব পরিমান সম্পদ বা এর থেকে বেশি সম্পদ থাকলে তাহলে মোট সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ যাকাত হিসেবে আপনাকে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি বর্তমানে ৬০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তার ৪০ ভাগ অর্থাৎ ১,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।
টাকার যাকাত দেওয়ার নিয়ম
কোন ব্যক্তির কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ন বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা থাকে অথবা এই পরিমান অর্থ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। টাকার যাকাত দেওয়ার নিয়ম হলো আপনার কাছে নিসাব পরিমান সম্পদ বা এর থেকে বেশি সম্পদ থাকলে তা টাকায় রুপান্তর করে তাহলে মোট টাকার ৪০ ভাগের ১ ভাগ টাকা যাকাত হিসেবে আপনাকে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি ৬০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তার ৪০ ভাগ অর্থাৎ ১,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।
যাকাত ক্যালকুলেটর
যাকাত দেওয়ার নিয়ম হলো আপনার কাছে নিসাব পরিমান সম্পদ বা এর থেকে বেশি সম্পদ থাকলে তাহলে মোট সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ সম্পদ যাকাত হিসেবে আপনাকে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার কাছে যদি ৬০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তার ৪০ ভাগ অর্থাৎ ১,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।
বন্ধুরা যাকাত দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আপনাদের কোন ধরনের জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেননা আর কোন ধরনের তথ্যগত ভুল থাকলে তা অবশ্যই আমাদের জানাবেন।