১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের গল্প

১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের গল্প। বন্ধুরা বিজয়ের অনুভূতি এক এক মানুষের কাছে এক এক রকম। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ১৬ই ডিসেম্বর মানেই আমাদের বিজয় এবং একটি স্বাধীন দেশ পাওয়া কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার কছে বিজয় মানে তারচেয়েও আরও বড় কিছু। একজন মুক্তিযোদ্ধাই জানেন কত ত্যাগ এর বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীন দেশটি পেয়েছেন। কত মা-বোন এর সম্ভ্রম এর বিনিময়েে আজকের এই স্বাধীন দেশটি পেয়েছেন। তাই এই প্রজন্মের কাছে এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে বিজয় এর অর্থ সম্পূর্ন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তারপরও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিরত্বগাথা বিজয়ের গল্প আমাদের শুনিয়ে থাকেন যাতে আমরা এই বিজয় সম্পর্কে অন্তর থেকে আরও গভীরভাবে উপলব্দি করতে পারি। এই লেখাটি ১৬ই ডিসেম্বর এর কিছু বিজয়ের গল্প উপস্থাপন করছি। আশা করি আপনাদের চেতনা এবং উপলব্দিকে আর বাড়িয়ে দিবে।

বিজয় দিবস বিজয় সংখ্যা

কামরুল হাছান মাসুক

অবন্তী মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে না। তার জানারও কথা না। অবন্তী ক্লাস ফাইভে পড়ে। ফাইভে পড়ুয়া একটা মেয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার কথা না। অবন্তীর জানতে ইচ্ছে করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কি হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধটা কি? অবন্তী ছোট বলে কেউ তাকে বলে না। বিজয়ের মাস আসলে একটা উৎসব হয় এতটুকুই। টিভিতে মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেখায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করে। অবন্তীর মাথায় একটা বিষয় ঢুকছে না। মুক্তিযুদ্ধ করে কেন। মুক্তিযুদ্ধ করার দরকার কি। অনেকেই বলে স্বাধীন হওয়ার জন্য। অবন্তীর তখন প্রশ্ন জাগে স্বাধীনতা মানে কি? অবন্তীর প্রশ্ন আর প্রশ্ন।

বিজয় দিবসের দিন অবন্তীর মামা আসল। অবন্তীর মামা অবন্তীর সাথে গল্প করতে পছন্দ করে। একমাত্র মামাকেই অবন্তীর বন্ধু মনে হয়। মামার কাছ থেকেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। মামা সবসময় থাকে না। তাই প্রশ্ন গুলিও জানা হয় না। মামার জন্য একগাদা প্রশ্ন সবসময়ই অবন্তী লিখে রাখে। এবার শুধু বিজয় দিবস সম্পর্কে জানবে। অন্য কিছু না।

অবন্তী মামাকে প্রশ্ন করে মামা বিজয় দিবস সম্পর্কে বল। অবন্তীর মামা বিজয় দিবস সম্পর্কে অবন্তীর ধারণা জানতে চায়। অবন্তী তার ধারণা বলে। মামা তখন বলে তাহলে তুই সবই জানিস। আর কি জানতে চাস।

অবন্তীর রাগ হয়। অবন্তী কিছুই জানে না। শুধুমাত্র ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে এতটুকুই জানে। এই জানাটাকে মামা বলে সে সব কিছু জেনে গেছে।

অবন্তীর রাগ দেখে মামা হাসতে থাকে। অবন্তীর রাগ বাড়তে থাকে। মামার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিতে হবে। অবন্তী চলে যাচ্ছিল মামা খপ করে ধরে ফেলে।

পাগলি মেয়ে। তুই যতটুকু জানিস ততটুকু সবাই জানে। এতটুকুতেই সবাই সন্তুষ্ট থাকে। এর বেশি কেউ জানতে চায় না। শুনতেও চায় না। তুই যখন জানতে চাচ্ছিস অবশ্যই বলব। তকে একটা উদাহরণ দিলে তুই বুঝবি। তকে জিন্নাহ, ভুট্টু ইত্যাদি বললে তুই বুঝবি না।

ধর, তর বান্ধবীর নাম অর্পা।

মামা আমার বন্ধুবীর নাম অর্পা না। ওর নাম শম্পা।

এই দিলি মেজাজাটা খারাপ করে। গল্পের মধ্যে কথা বলতে হয় না। গল্পটা মনোযোগ দিয়ে শুনে তারপর মন্তব্য করতে হয়।

মামা আমি মন্তব্য করছি না। সত্যি কথা বলছি।

এই হচ্ছে তকে নিয়ে জ্বালা। শুন যা বললাম, শম্পা উওর পাড়ায় থাকে। তুই থাকিস দক্ষিণ পাড়ায়। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে উওর পাড়া এবং দক্ষিণ পাড়ার দায়িত্ব শম্পার উপর দেওয়া হল। শম্পা করল কি দায়িত্ব নিয়ে শুধু উওর পাড়ার কথা ভাবতে লাগল। তরা সবাই মিলে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে শম্পার হাতে দিস। শম্পা সমস্ত অর্থ উওর পাড়া মানে নিজ পাড়ায় ঢালতে থাকে। তুই প্রতিবাদ করলি, তকে ন্যায্য দাবি দেওয়ার জন্য। ওরা করল কি তর সাথে ছলনা শুর“ করে দিল। উওর পাড়া, দক্ষিণ পাড়ায় নির্বাচন হল। তুই পাস করলি। শম্পা তকে দায়িত্ব দিল না। আবার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগল। তুই ধর্মঘটের ডাক দেওয়াতেই শম্পা তার বাহিনী নিয়ে তকে আক্রমণ করল। তর কিছু নেই। কারণ তুই যুদ্ধ করতে চাস নি। তাই বলে তুই বসে থাকবি। বসে থাকবি না। তুইও প্রতিরোধ গড়ার জন্য চেষ্টা করেছিস। তুই যখন চেষ্টা করে সফল হবি তখন তাকে বিজয় দিবস বলে। বুঝলি পাগলি।

মামা এবার বুঝতে পারলাম। আমরা একটি দেশই ছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের নির্যাতন করত। আমাদের সম্পদ গুলো ওড়াই ভোগ করত। আমাদের শুধু ওদের দাস বানিয়ে রাখতে চাইছিল। তাই আমরা প্রতিবাদ করে ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করি। যেই দিন আমরা স্বাধীন হই ঐ দিনটাকে বিজয় দিবস বলে।

একেবারে ঠিক। ফার্স্ট ক্লাস বুঝেছিস।

 

বায়োস্কোপ

তাহমিনা শিল্পী

পৌষের সকালের নরম রোদ মুখে এসে পড়ল আমার। চোখ খুলেই সামনের দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। সকাল নয়টা বেজে গেছে! ইস্ ঘুম ভাঙতে এত দেরী হয়ে গেল! আজকাল আর ঘুম ভাঙার জন্য আমাকে এলার্ম দিতে হয়না। রোজ ভোর বেলায় চায়ের কাপে চামচ নেড়ে মজিদ চাচার চা বানানোর টুঙটুঙ মিষ্টি শব্দেই সকালটা শুরু হয় আমার।

 

মজিদ চাচা একজন অসাধারন মানু্ষ। তার সাথে আমার আলাপ অনেকটা নাটকীয়। প্রায় বছরখানেক আগে আমাদের মহল্লার রাস্তার পাশে একটি নতুন বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান উঠল। বাসার সাথে লাগোয়া ছোট্ট চায়ের দোকানটা মজিদ চাচার। সবগুলো চায়ের দোকানের নামগুলো “জলিলের চা দোকান”, “রশিদ টি স্টল” এভাবে করে দোকানীর নিজের নামে।

কিন্তু মজিদ চাচার দোকানের নাম “বায়োস্কোপ”। আমার ভীষন কৌতূহল হল কারনটা জানার। কিন্তু আমার বাবার ধারনা মহল্লার চা দোকানে মেয়েদের যাওয়াটা ঠিক ভালো দেখায় না। তাই আমার আর জানা হয়ে উঠেনা। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় দোতরার শব্দ কানে এলো। বারান্দায় গিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমি চমকে উঠলাম। মজিদ চাচা দোকানে বসে দোতরা বাজিয়ে গান গাইছে। আর কিছু লোক দোকানের বাইরে বেঞ্চে বসে চা খেতে খেতে গান শুনছে। অদ্ভুদ এক দ্যুতি যেন ছড়িয়ে আছে তার চোখে মুখে।এবার আর কৌতুহল চেপে রাখতে পারলাম না। পরদিন সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়ে গেলাম মজিদ চাচার দোকানে। তার দোকানের নামটা বায়োস্কোপ কেন চাইতেই সে বলল- “দোঁলন আম্মা কেমন আছেন? আপনার লেখাপড়া কেমন চলছে? যদি অসুবিধা না হয়, তাহলে এককাপ চা দেই।”

মজিদ চাচার মুখে নিজের নাম শুনে এবার আরেকবার আমার চমকানোর পালা। আমি বাবার নিষেধ ভুলে বসলাম দোকানের বেঞ্চে। বললাম- “আপনি আমাকে চিনেন? আমার নাম জানলেন কি করে?” কিছু না বলে শুধু একটু হাসলেন। খুব যত্ন করে চা বানিয়ে খাওয়ালেন। টাকা বের করে দিতেই এবার মুখ খুললেন। বললেন-“আম্মা আপনার কাছ থেকে আমি চায়ের দাম নিতে পারবো না। আমার একটা মেয়ে ছিল। আপনার নামেই তার নাম ছিল। “এখন তার মেয়েটি কোথায় জানতে চাইলাম। মজিদ চাচা বলল-“আম্মা অনেক লম্বা ইতিহাস। আজ সব বললে তো আপনার কলেজে যাওয়ার দেরী হয়ে যাবে।” তারপর থেকে রোজ সকালে কলেজে যাওয়ার আগে মজিদ চাচার হাতের এককাপ চা আমার পাওনা হয়ে গেল। সেই সাথে তার জীবনের গল্প শোনা।

মজিদ চাচার পৈত্রিক বাড়ি গাইবান্ধ্যা জেলার সাদুল্যাপুর গ্রামে। চাচি আর অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে দোলনকে নিয়ে ছিল তার তিনজনের ছোট সংসার। পেশা ছিল সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাবা-দাদার আদি ব্যবসা কাঠের তৈরী বাক্সে বায়োস্কোপ দেখানো। আর সন্ধ্যাটা কাটাতেন শখের দোতরা আর গানের সাথে। অনেক বড় বাড়ি ছিল তাদের। সবাই মজিদ চাচার গান শোনার জন্য জড়ো হতো তার বাড়ির উঠোনে। এভাবে হাসি-আনন্দে কাটছিল তার দিন।

সময়টা ছিল উনিশ’শ একাত্তার’মার্চ মাস। দেশটা তখন পাক বাহিনীর দখলে। হানাদারের কালো থাবায় চারিদিকে জ্বলছিল আগুন, ঘরে ঘরে মারা হচ্ছিল নিরাপরাধ হাজারো মানুষ। লাঞ্ছিত করা হচ্ছিল অসহায় মা-বোনদেরকে। তখন অনেকেই দেশকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিল। যোগ দিচ্ছিল মুক্তিবাহিনীতে। দেশের এমন দুর্দিনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারেনি মজিদ চাচা। সেও মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। আর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছিল তার পৈত্রিক বায়োস্কোপটি।

বায়োস্কোপের বাক্সটির মধ্যে করে সে মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ পৌঁছে দিতে। সাথে খাবার ও খবরা খবরও পৌঁছাত। তারপর একদিন এলো সেই কালো রাত। পাকিস্তানিদের দোশর রাজাকারদের মাধ্যমে পাক বাহিনীর কাছে মজিদ চাচার মুক্তিবাহিনীকে সহযোগীতা করার খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল। সেদিন রাত তখনও মজিদ চাচা বাড়ি ফিরেনি। তার বাড়িতে হামলা করল পাক হানাদারেরা। তাকে না পেয়ে বাড়িতে চালালো তান্ডব। মেয়ে দোঁলনকে ধরে নিয়ে গেল ক্যাম্পে। বাঁধা দেয়ায় চাচিকে গুলি করে মেরে রেখে চলে গেল। মজিদ চাচা যখন বাড়ি ফিরে এলো তখন আর কাউকেই পেল না।

এর কয়েকমাস পর ১৬ ডিসেম্বর’১৯৭১ দেশ হানাদার মুক্ত হল। বাংলাদেশের আকাশে উঠল বিজয়ের নতুন সূর্য। সবাই বিজয় কেতন উড়িয়ে ফিরল বাড়ি। মজিদ চাচাও মেয়ে ফিরার আশায় বুক বাঁধল। একদিন সত্যিই ফিরে এলো দোঁলন। কিন্তু ততোদিনে তার ভিতর বাড়তে শুরু করেছে পাকিস্তানীদের এক মানব সন্তান। মেয়েটি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে। মজিদ চাচা তাকে সান্তনা দেয়, সাহস জোগায়। কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে তাকে শুনতে হত নানারকমের কটু কথা, টিপ্পনী। সহ্য করতে না পেরে একদিন দোঁলন বেছে নিল আত্মহননের পথ।

সেই যে বাড়ি ছাড়া, গ্রাম ছাড়া হল মজিদ চাচা, আর ফিরল না। অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়েছে। সরকারী ভাতা নিয়ে বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে নিয়েছে। কিন্তু মজিদ চাচা তা করেননি। কারন যে দেশের জন্য তিনি এতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যে দেশের কিছু অকৃতজ্ঞ কিছু লোকের জন্য তার মেয়ের সম্ভ্রমের অসম্মান হয়েছে।

আজ সর্বস্ব হারা হয়েছেন। সে দেশেই আজ কিছু অসাধু লোকের জয়জয়কার চলছে। তাই তার আর কিছুই চাওয়ার নেই এদেশের কাছে। শুধু স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে প্রাণের তাগিদেই স্মৃতিসৌধে না গিয়ে পারে না। সবকথা বলে মজিদ চাচার অন্তর থেকে বেরিয়ে এসেছিল অনেকদিনের চাপা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস। চোখের কোণা ভিজে উঠেছিল। আর আমার মনে জন্ম নিয়েছিল পিতৃসম ভালাবাসা আর শ্রদ্বা।

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। মনে পড়ল ফুল নিয়ে মজিদ চাচা স্মৃতিসৌধে গিয়েছে। আমারও আজ বন্ধুদের সাথে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার কথা। দশটায় কলেজে থাকতে হবে। হাতে সময় মাত্র এক ঘন্টা। চটজলদি তৈরী হয়ে বেরুতে হবে। পৌঁছাতে দেরী হলে বন্ধুরা সবাই খুব রেগে যাবে। তাড়তাড়ি করে বিছানা ছাড়লাম। জানালার পর্দা সরিয়ে একবার বাইরে তাকালাম। মজিদ চাচার দোকান আজ বন্ধ। পৌঁষের হিমেল বাতাসে দোকানের চালের উপর মাথা উঁচু করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা।

 

বিজয়ের গল্পের কতটুকু জানো তুমি?

আসাদ স্যার

ক্লাসে নোটিশ এলো, ১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষে আয়োজিত একটি প্রতিযোগিতায় প্রতি শ্রেণী থেকে পাঁচজনকে পাঠাতে বলা হয়েছে। নোটিশ পড়ে শোনানোর পর আসাদ স্যার মাথা তুলে তাকালেন ক্লাসের দিকে। ক্লাসের অর্ধেক ছেলেমেয়ে হাত তুলে বসে আছে। সবাই যেতে চায়।

আসাদ স্যার পড়লেন মুশকিলে। কাকে রেখে কাকে নেবেন।

তিনি এক হাতে নোটিশের কাগজ নিয়ে অন্য হাতে মাথা চুলকাতে লাগলেন।

 

নোটিশ নিয়ে আসা পিয়ন মফিজ চাচা বললেন, “স্যার বেয়াদবি না নিলে আমি কই। একটা পরীক্ষা নেন, যারা ভালো কইরবো তাগোরে পাঠাই দিলেন।”

 

আসাদ স্যার খুশি হয়ে গেলেন। খাসা আইডিয়া তো! তিনি ঠিক করলেন বিজয় দিবসের উপর একটা কুইজ নেবেন। যে পাঁচজন সবচেয়ে ভালো নম্বর পাবে তাদের পাঠিয়ে দেবেন প্রতিযোগিতায়। যারা আসলেই যোগ্য তারা সুযোগ পাবে।

 

“কালকে তোমাদের একটা কুইজ নেয়া হবে। ১০টা প্রশ্ন থাকবে। প্রত্যেকটায় এক নম্বর করে মোট ১০ নম্বর। ৮ এর কাছাকাছি পৌঁছাতে যারা সফল হবে তেমন পাঁচজনের জন্য কালকে বিজয় দিবস। বোঝা গেছে?”

ক্লাস সমস্বরে বললো, “জ্বী স্যার!”

রাতে বাড়ি ফিরেই আসাদ স্যার প্রশ্ন তৈরি করতে বসলেন। আসাদ স্যারের প্রশ্নটা এখানে দিয়ে দিচ্ছি, দেখি আমরা কে কতটা জানি!

 

কে ফোর্সের অধিনায়ক কে ছিলেন?

ঊত্তরঃ খালেদ মোশাররফ

বিস্তারিতঃ মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার। তাকে ২৪শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদেশে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সিলেট ক্যান্টনমেন্টে স্থানান্তরিত করা হয়। ২৬শে মার্চ তিনি ও তার ইউনিট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

আত্মসমর্পণের সময় বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান সাক্ষী কে ছিলেন?

ঊত্তরঃ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার

বিস্তারিতঃ এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার যিনি এ.কে. খন্দকার নামে পরিচিত (জন্ম: জানুয়ারি ১, ১৯৩০) বাংলাদেশের একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তিনি বিমানবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন ও উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

 

১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পূর্বেই কোন দুইটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়?

ঊত্তরঃ ভুটান, ভারত

বিস্তারিতঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক মাসের মধ্যে বেশিরভাগ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশকে তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্বে ভুটান সর্বপ্রথম সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। একই দিনে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভারতও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। নেপাল ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২, মায়ানমার ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২ ও যুক্তরাজ্য ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

 

১৯৭৩ সালের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে কোনটি ঘোষণা করা হয়?

ঊত্তরঃ বীরত্বসূচক পদক

বিস্তারিতঃ আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য মুক্তিযোদ্ধাগণকে বিভিন্ন ধরণের পদক প্রদান করা হয়। এই পদকগুলি কয়েক স্তরে বিভক্ত। যেমন- বীরত্বসূচক পদক, প্রধান সেনাপতির প্রশংসাপত্র, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক পদক এবং আহতসূচক ফিতা। মোট ৬৭৭ জন বীরত্বসূচক পদক পান, যেগুলির নামও আমাদের সবার জানা- বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম এবং বীরপ্রতীক।

 

“Bangladesh: Out Of War, A Nation Is Born” শিরোনামে ১৯৭১ এর ২০ই ডিসেম্বর একটি বিখ্যাত পত্রিকায় একটি আর্টিকেল বের হয়। পত্রিকাটির নামটি কি তোমার মনে আছে?

ঊত্তরঃ টাইম ম্যাগাজিন

বিস্তারিতঃ টাইম ম্যাগাজিনের ১৯৭১ সালের ২০ই ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশ হওয়া আর্টিকেলটির প্রথম লাইন ছিলো এরকম, “JAI Bangla! Jai Bangla! From the banks of the great Ganges and the broad Brahmaputra, from the emerald rice fields and mustard-colored hills of the countryside, from the countless squares of countless villages, came the cry.”

 

পাকবাহিনী ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর কোথায় আত্মসমর্পণ করে?

ঊত্তরঃ ঢাকার রমনা রেস্কোর্স ময়দানে

বিস্তারিতঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের দলিল ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪.৩১ মিনিটে ঢাকার রমনা রেস্কোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী সই করেন। পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল তিন প্রস্থে প্রস্তুত করা হয়েছিল। একটি প্রস্থ ভারত সরকার এবং দ্বিতীয় প্রস্থ পাকিস্তান সরকারের নিকট সংরক্ষিত আছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্য দলিলটি বাংলাদেশে নেই।

 

২০১৩ সালের বিজয় দিবসে কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে?

ঊত্তরঃ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী লাল সবুজ ব্লক নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে

বিস্তারিতঃ ৪৩তম বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭ হাজার ১১৭ জনের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় পৃথিবীর বৃহত্তম মানব জাতীয় পতাকা। বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে স্মরণ করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব জাতীয় পতাকা নির্মাণের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এই আয়োজন করেছিল রবি আজিয়াটা। মানব জাতীয় পতাকা তৈরির এই নতুন বিশ্ব রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিল।

 

আত্মসমর্পনের পরে পাকিস্তানী দের যুদ্ধবন্দি হিসেবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়?

ঊত্তরঃ ঢাকা সেনানিবাস

বিস্তারিতঃ পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। আত্মসমর্পণ দলিলের একটি অংশ

এগুলো অবশ্যই পড়ুন—

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকাস্থ শাখার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ কত সালে পাশ হয়?

ঊত্তরঃ ১৯৭২ সালে

বিস্তারিতঃ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় অবস্থিত স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখাকে বাংলাদেশ ব্যাংক নাম দিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৭২ পাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বলে ঘোষনা করা হয়। এর কার্য নির্বাহী প্রধান “গভর্নর” হিসাবে পরিচিত।

 

জাতীয় স্মৃতিসৌধের নকশা প্রণয়ন করেন কে?

ঊত্তরঃ সৈয়দ মাইনুল হোসেন

বিস্তারিতঃ স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন জাতীয় স্মৃতিসৌধের এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের স্থপতি। বাকিদের মধ্যে ফজলুর রহমান খান বাংলাদেশের বিশ্বখ্যাত স্থপতি ও পুরকৌশলী ছিলেন । তিনি পৃথিবীর অন্যতম উচ্চ ভবন শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে উইওলস টাওয়ার)-এর নকশা প্রণয়ন করেন। মাঝারুল ইসলাম বাংলাদেশ স্থপতি ইন্সটিটিউটের প্রথম সভাপতি ছিলেন। বশিরুল হক ছায়ানট ভবন ও আসা প্রধান অফিস ভবনের স্থপতি, তিনি তাঁর পরিবেশবাদী স্থাপনার ধরনের জন্য প্রসিদ্ধ।